<Transparent Logo
Scroll down

jatrarath

যাত্রারথ
৩০ জুন, ২০২০

রথযাত্রা বাঙালির জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রা এই দিন রথে চেপে রওনা হন মাসির বাড়ির উদ্দেশে। ফিরে আসেন এক সপ্তাহ বাদে উল্টোরথের দিন। এই রথের দিন দুর্গাপুজোর প্রাথমিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে। অনেকে আবার এই দিন খুঁটি পুজোও করেন। অন্যদিকে বাঙালি সংস্কৃতির আদি লোকাবিনোদন যাত্রার ষষ্ঠী থেকে জষ্টি মরশুমের বায়নাও শুরু হয় রথযাত্রা শুভ দিনে, সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় যাত্রার বিজ্ঞাপন। ...

কী আছে ভিতরে

অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও মানুষ ধর্মোৎসবে নৃত্য-গীতাদির সাহায্যে সাধারণের মধ্যে ধর্মমাহাত্ম্য প্রচার করত। দেবদেবীর পুজো উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রার (going in a procession) ব্যবস্থাও হত। দোলযাত্রা, রথযাত্রা, মাঘীসপ্তমীর স্নানযাত্রা, দশহরা স্নানযাত্রা প্রভৃতি আজও এর সাক্ষ্য বহন করছে। এই শোভাযাত্রায় নৃত্য-গীতযোগে দেবমাহাত্ম্য কীর্তিত হত। প্রাচীনকালে এই জঙ্গম উৎসবকে বলা হত যাত্রা। বস্তুত যাত্রা শব্দটি গত্যৰ্থক। গমনার্থক ‘যা’ ধাতু থেকে এর উৎপত্তি [যা + ত্র (ভাবে) + আ (স্ত্রীং) ]।
বলা হয় ক্রমে সেই নৃত্য-গীতময় দেবমাহাত্ম্য বর্ণনা দেবস্থানের কাছেই দীর্ঘসময় ধরে অনুষ্ঠিত হতে থাকে, এবং লোকে সেখানে এসেই তা শুনতে শুরু করে। এতে পরিক্রমার ব্যাপকতা কিছুটা কমল, নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা ব্যক্তিরাই পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করতেন, কিন্তু ওই নির্দিষ্ট স্থানে নাচ-গানসহ ধর্মানুষ্ঠানও যাত্রা নামেই বিখ্যাত হয়ে রইল। পরবর্তীকালে এইসব ধর্মোৎসবের নৃত্য-গীতানুষ্ঠানের সঙ্গে অভিনয়ের উপাদান সংযোজিত হওয়ায় যাত্রাপালার উদ্ভব হয়।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের তথাকথিত নিম্নজাতিবর্গের ঐতিহ্য মেনে লৌকিক দেবতাদের যেসব উৎসব হয় তার প্রচলিত নাম ‘যাত’। যেমন উলা বীরনগরের ‘উলাইচণ্ডীর যাত’। ‘যাত্রা’ শব্দের অর্থ প্রসঙ্গে সুকুমার সেন লিখেছেন, “যাত্রা শব্দের মূল অর্থ হইতেছে দেবতার উৎসব উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রা ও উৎসব। আধুনিক কালে ‘নদীর যাত’, ‘মানাদের যাত', এই সব স্থলে মূল অর্থ অনেকটা বজায় আছে। তাহার পর অর্থ হইল, দেবতার উৎসব উপলক্ষ্যে নাটগীত, তাহা হইতে দেবলীলাত্মক অথবা অন্য কাহিনীময় নাটগীতি।” এই ‘যাত' শব্দটি দ্রাবিড় ভাষা থেকে এসেছে বলে অনেকেই মনে করেন। সুতরাং ‘যাত্রা’ শব্দটিও দ্রাবিড় ভাষা উদ্ভুত হতে পারে। মধ্যযুগে যাত্রাকে দেব-দেবীর প্রতি উৎসর্গীকৃত উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আমাদের মনে হয় ‘যাত' শব্দের পরিবর্তিত রূপ ‘যাত্রা’ হবার সম্ভাবনা বেশি।
যাত্রা শিল্পের ইতিহাস গ্রন্থে গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ বলেন, “এই সব উৎসবে দেবতার মাহাত্ম্য সূচক কাহিনিতে নাচ-গান-বাজনার প্রাধান্য ছিল বলেই একে ‘নাটগীতি’ বলা হত। কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর ‘উত্তর কাণ্ডে’ শিব-দুর্গার বিবাহের যে বর্ণনা আছে তাতে নাটগীতের কথা আছে, আছে তার সঙ্গে ‘মঙ্গল’-কাব্যের যোগ।
নাটগীত দেখি শুনি পরম কুতুহলে।
কেহো বেদ পঢ়ে কেহ পঢ়এ মঙ্গলে।।
নানা মঙ্গল নাটগীত হিমালয়ের ঘরে।
পরম আনন্দে লোক আপনা পাসরে।।
(সাহিত্য পরিষৎ সংস্করণ, পৃ. ৬)”
ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে, “যাত্রা বা উৎসব উপলক্ষে নাটগীতের অনুষ্ঠান হইত বলিয়া ক্রমে নাটগীতকেই যাত্রা বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে।” (বাংল্যনাট্য সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ. ৬৯)
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য Comedy শব্দটি এসেছে ক্লাসিক্যাল গ্রিক kōmōidía থেকে যার দু-টি অংশ হল κμος (Kōmos) মদ্যপানরত শোভাযাত্রা এবং δή (ōidé) গীত বা গায়ন।
সংস্কৃত বিশ্বকোষ-এ যাত্রা সম্পর্কে বলা হয়েছে—যাত্রাতু যাপনোপায়েগতৌ দেবার্চনোৎসবে।
উৎপত্তি ও বিবর্তনের চড়াই-উৎরাই পথ ধরে উনিশ-বিশ শতক পার হয়ে স্বাধীন দেশে পাঁচের দশকের শেষ ও ছয়ের দশকের শুরু থেকে যাত্রার দুনিয়ায় এক অভিনব পরিবর্তন হয় সংবাদপত্র ও বিজ্ঞাপনের হাত ধরে। অন্যান্য দিনে যা বিজ্ঞাপন ছাপা হোক-না কেন ষষ্ঠী থেকে জষ্টি যাত্রার মরশুমের বায়না শুরুর দিন অর্থাৎ রথযাত্রার দিন দৈনিকে প্রকাশিত যাত্রার বিজ্ঞাপনগুলোর গুরুত্ব জনমানসে সম্পূর্ণ আলাদা। করোনা ও আমফান বিধ্বস্ত বছরে এবার যাত্রার ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের অবস্থা খুবই খারাপ। এই কঠিন সময়ে লোকনাটক যাত্রার অতীত গৌরব ও বর্তমান অশনির সংকেতের কথা স্মরণ করে
হরপ্পা-র নিবেদন এই পুস্তিকা।

ডাউনলোড করুন

প্রকাশকাল: ৩০ জুন, ২০২০
প্রচ্ছদ: সৌম্যদীপ
শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ

সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি

গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে বছরে তিনটি সংখ্যার জন্য মোট পাঁচশো টাকা দিতে হয়। (ডাকমাশুল আলাদা)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।

সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।

মুদ্রিত সংখ্যা
হরপ্পার যাত্রা শুরু ২০১৭-র অক্টোবর মাসে চতুর্মাসিক পত্রিকা হরপ্পা লিখন চিত্রণ-এর প্রকাশলগ্নে। মূলত সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে হরপ্পা আত্মপ্রকাশ করে বাংলার শিল্পসংস্কৃতি আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি পালাপার্বণ প্রভৃতি নানা বিষয়কে দু-মলাটের ভিতর নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে। দেখবেন চলুন...