<Transparent Logo
Scroll down

হরপ্পার কথা

হরপ্পার যাত্রা শুরু ২০১৭-র অক্টোবর মাসে চতুর্মাসিক পত্রিকা হরপ্পা লিখন চিত্রণ-এর প্রকাশলগ্নে। মূলত সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে হরপ্পা আত্মপ্রকাশ করে বাংলার শিল্পসংস্কৃতি আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি পালাপার্বণ প্রভৃতি নানা বিষয়কে দু-মলাটের ভিতর নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে। লেখার সঙ্গে মানানসই আলোকচিত্র-অলংকরণ দিয়ে সুবিন্যস্ত ও সুমুদ্রিত আকারে পাঠকের কাছে পৌঁছানোই ছিল এই বিষয়কেন্দ্রিক পত্রিকার উদ্দেশ্য। প্রথম সংখ্যায় পত্রিকাটির পথ-চলা শুরু বলেই বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল বাঙালির হরেক বিষয়ের প্রস্তুতিকে—গান-শেখা থেকে থিয়েটার, লেখালিখি থেকে অনাথ আশ্রম শুরু, পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তুতি থেকে বেড়াতে যাওয়া—সব কিছুই ছিল সে তালিকায়। এরপর দ্বিতীয় সংখ্যায় তুলে ধরা হয় চলচ্চিত্রের সূত্রে ভ্রমণের বৃত্তান্ত—দর্শক থেকে পরিচালক, সিনে-টেকনিশিয়ান থেকে অভিনেতা/অভিনেত্রী সকলেরই নানাভাবে হয় ভ্রমণ। বাংলা হিন্দি বা বিদেশি, আলোচনায় এসেছে সব ধরনের সিনেমা—ভ্রমণকে তো আর গণ্ডি টেনে আটকানো যায় না। তৃতীয় সংখ্যায় বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল পেশাদার ফোটোগ্রাফি—রঘু রাই থেকে শুরু করে নানান পেশাদার আলোকচিত্রী যেমন জানিয়েছিলেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা তেমনই উঠে এসেছিল পারিবারিক ছবি-তোলা বা দার্জিলিং থেকে কলকাতা পরযন্ত বেশ কিছু পুরোনো স্টুডিয়োর গল্প। বছর ঘুরে আবার অক্টোবর ফিরে আসে, ফিরে আসে শারদ উৎসবের শুভক্ষণ। দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যার বিষয় প্রকাশকালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হল দুর্গা। বাঙালির সেরা উৎসবে পূজিতা দেবীর নানা রূপ, নানা অনুষঙ্গ দু-মলাটের মধ্যে তুলে ধরার প্রয়াস করা হল এই শারদসংখ্যায়। এরপর দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায় বিষয় হিসেবে বাছা হল বাঙালির পুস্তকচর্চার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ রীতিকে। আগে প্রায়শই প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে সমূল্যে বা বিনামূল্যে বিতরণ করা হত পাতলা কম পাতার বই—পুস্তিকা। এখনও পুরোপুরি পুস্তিকা ছাপার রেওয়াজ উঠে না-গেলেও, পুরোনো পুস্তিকার বিপুল সম্ভার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে সংরক্ষণের অভাবে। পুস্তিকায় ধরে রাখা বাঙালির ইতিহাসের খণ্ডচিত্র পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হল বইমেলা ২০১৯-এর সময় প্রকাশিত এই সংখ্যায়। সঙ্গে দেওয়া হল পি এম বাগচীর কালি বিষয়ক প্রচার পুস্তিকার মুদ্রিত প্রতিলিপি। তৃতীয় সংখ্যায় বিষয় ছিল সংবাদপত্র—বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশনার দ্বি-শতবর্ষ অতিক্রমকে সম্মান জানাতে। আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত সংবাদপত্র ধীরে-ধীরে ওজনদরে বিক্রি হয়ে যায়। সেইসঙ্গে শেষ হয়ে যায় দৈনন্দিন ইতিহাসের দলিল। কিছু সংগ্রহশালা, আর্কাইভ ও গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র সংরক্ষিত হলেও তা আমাদের সবসময়ের নাগালের বাইরে। তাছাড়া সংবাদপত্র প্রকাশনার বহু খুঁটিনাটি তথ্যই আমাদের অজানা। সংবাদপত্রের সেই সব খবরাখবর থেকে ইতিহাসধর্মী লেখা সংকলিত হল এ সংখ্যায়। সঙ্গে ক্রোড়পত্র হিসেবে বিতরিত হল বাংলা হরফ নিয়ে রিকার্ডো ওলোকোর গবেষণা সন্দর্ভর বাংলা ভাষান্তর: লাইনোটাইপ থেকে ডিজিটাল। নদীর স্রোতের মতো বহমান সময়ের সঙ্গে পত্রিকার দু-বছর প্রকাশকাল সম্পূর্ণ হল এবং শারদসংখ্যা মাতৃরূপেণ-য় আবার বিষয় হিসেবে নির্বাচন করা হল দুর্গা। নিবন্ধ-প্রবন্ধ-অলংকরণ-আলোকচিত্রে ঠাসা পত্রিকাটি পাঠকের কাছে অন্য এক বৈচিত্র্যের ডালি নিয়ে হাজির হল। তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যার বিষয় ছিল গল্পগাছা—বাঙালির মুখে-বলা গল্পের প্রাচীন অভ্যাসকে কেন্দ্র করে। বর্তমানের আধুনিক বিনোদনের চাপে হারিয়ে যেতে চলা এই প্রথাটিকে তুলে ধরতে দুই বাংলার নানা প্রাচীন গল্প-বলার প্রথাকে তুলে ধরার পাশাপাশি পত্রিকার সঙ্গে পুস্তিকাকারে পাঠকের কাছে পৌঁছে গেল বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রচলিত বোকা জামাইয়ের গল্পের নির্বাচিত সংকলন।
২০২০-তে এই সংখ্যা প্রকাশের পর গোটা বিশ্ব জুড়ে নেমে আসে এক অজানা আতঙ্ক। স্তব্ধ হয়ে যায় সব কিছু। কিন্তু হরপ্পার চলার পথ থেমে থাকেনি। করোনা বিধ্বস্ত লকডাউন সময়ে হরপ্পা-র পক্ষ থেকে পয়লা বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয় প্রথম বৈদ্যুতিন পুস্তিকা ‘হালখাতা’। এরপর একে-একে প্রকাশিত হয় বুদ্ধপূর্ণিমায় ‘উলাইচণ্ডী’ (৭ মে ২০২০), জৈষ্ঠমাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে ‘অরণ্যষষ্ঠী’ (২৮ মে ২০২০), কবি প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়ের শ্রাদ্ধবাসরে শ্রদ্ধার্ঘ রূপে ‘মহালয়ার জাতক’ (১ জুন ২০২০), বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ‘পিঞ্জরে বসিয়া...’ (৫ জুন, ২০২০)।

হরপ্পাকে নিয়ে কথা

আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, জুন ৫, ২০২১
করোনায়িত

করোনা-কালে কীভাবে খাবারের হোম ডেলিভারি হচ্ছিল, কাগজে প্রকাশিত তার প্রথম বিজ্ঞাপনটি: “আমাদের সেফ ডেলিভারী এক্সপার্ট পৌঁছে আপনার দরজার সামনে একটি ক্যারি ব্যাগের মধ্যে পিৎজা রেখে যাবে। তারপরে পিছিয়ে গিয়ে এক নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে অপেক্ষা করবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আসছেন।”... বা গুঁড়ো সাবানের বিজ্ঞাপনে নিরাপদে থাকতে বলার মধ্যেও আবছা অক্ষরে মনে করিয়ে দেওয়া পণ্যটির নাম... এ সব নমুনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে আসা: ‘করোনার টাইমে একেই বলে সার্থক ক্যামোফ্লেজড বিজ্ঞাপন।’ হরপ্পা প্রকাশ করেছে বৈদ্যুতিন পুস্তিকা করোনায়িত বাণিজ্য: বিজ্ঞাপনের দিনলিপি, কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্তের লেখায়, সোমনাথ ঘোষের অলঙ্করণে, শ্লেষ-হিউমার-বিশ্লেষণে মোড়া।


আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, এপ্রিল ৫, ২০২১
গভীর নির্জনে

কালো জমিতে সাদা লতাপাতা-ফুলের নকশার অন্তরে খোদিত শব্দদু’টি— ‘গভীর নির্জনে’। সুধীর চক্রবর্তী (১৯৩৪-২০২০) চলে গেছেন প্রায় চার মাস, তাঁর অনন্য লেখন-গবেষণা-সম্পাদনার প্রসাদগুণরহিত এই মুহূর্তের সারস্বত জগৎ এক গভীর, বিষণ্ণ নির্জনতা অনুভব করছে বইকি। হরপ্পা লিখন চিত্রণ পত্রিকার প্রকাশিত সাম্প্রতিকতম বৈদ্যুতিন ... পুস্তিকাটিতে ফুটে উঠেছে জীবনরসিক মানুষটির নানা দিক ও আঙ্গিক। দুশো পৃষ্ঠারও বেশি পরিসরে, তেরোটি মননশীল ও স্মৃতিমেদুর নিবন্ধে বাঙালির গান থেকে সাহিত্য, লোকশিল্প-সংস্কৃতির বিশ্বে দাপিয়ে বেড়ানো মানুষটিকে ছোঁয়ার প্রয়াস করেছেন শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়, রংগন চক্রবর্তী, সুশোভন অধিকারী, দেবাশীষ দেব, স্বপনবরণ আচার্য প্রমুখ। অমূল্য ছবি, পত্রিকা-প্রচ্ছদ, সুধীরবাবুর জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি, হাতে-লেখা সম্পাদকীয়র প্রতিলিপিতে অলঙ্কৃত সংখ্যাটি।


আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, জানুয়ারি ৪, ২০২১
মানবপুত্র

মহামানবের জন্মক্ষণের সঙ্গে বারে বারে নানা ভাবে মিশেছে মানব-ইতিহাসের যুগান্তকারী মুহূর্ত। বর্ষশেষে সূর্যের আরাধনার সঙ্গেও প্রায় একাকার আলোর দিশারির আবির্ভাবের লগ্নটি। বড়দিন উপলক্ষে প্রকাশিত হরপ্পা/ লিখন চিত্রণ পত্রিকার (সম্পাদক: সৈকত মুখোপাধ্যায়) বৈদ্যুতিন পুস্তিকা ‘মানবপুত্র’-তে সেই ইতিহাসকেই ধরেছেন অপ্রতিম চক্রবর্তী। ... ভাইকিংদের ‘ইস্ত্রুর’ পুজো থেকে কী ভাবে এল ইস্টার, বিশ্বে কোন পথে ছড়িয়ে পড়ল খ্রিস্ট-বার্তা, কী ভাবে এল এ দেশে, আছে সেই খোঁজ। সোমনাথ ঘোষের শিল্প নির্দেশনা, সৌম্যদীপের প্রচ্ছদ ও ব্যবহৃত আলোকচিত্র পাঠানুভূতিকে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে।


আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, নভেম্বর ২, ২০২০
অনুবাদেন্দ্র

“মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়— নিজ-নিজ মর্জি অনুযায়ী প্রচণ্ড মজারু।... অধুনা চতুর্দিকে চাউর হলেও, পশ্চিম-নন্দিত প্রাচী-র কৃতিসন্তান, দীর্ঘদেহী সত্যজিৎ রায়-কে, মানববাবুই প্রথম বিভূষিত করেছিলেন Orient Longman খেতাবে।” মানববাবুকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতির সঙ্গে এও খেয়াল করিয়ে দিতে ভোলেন না শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়— ... আশির দশকে এক সাময়িকীতে মানবেন্দ্র লিখেছিলেন ধারাবাহিকী ক্যালিবানের পৃথিবী। পঞ্চাশের দশক থেকে ‘ক্যালিবানি স্পর্ধা-ঔদ্ধত্যের হুতাশনে লাতিন আমেরিকায়, ক্যারিবিয়ান্সে, কাব্যে-উপন্যাসে’ ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাতে। এই অনবদ্য গদ্যটি দিয়েই শুরু হয়েছে হরপ্পা-র (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) বৈদ্যুতিন পুস্তিকা ও শ্রদ্ধার্ঘ্য মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কবিতা নিয়ে লিখেছেন অভিজিৎ রায়, ‘অনুবাদেন্দ্র’ শিরোনামে সৌম্যদীপ। প্রচ্ছদ ও শিল্পনির্দেশনায় সোমনাথ ঘোষ।


আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০
নতুন গল্প

‘‘নর্থ ক্যালকাট্টাই দুধেল রাবড়ি, সে তো বটেই— তৎসহকারে বাদাম, কিসমিস, আখরোট, আঙুর, শসা, কলা, সরের নাড়ু, চন্দ্রপুলি, তিলকোটা চিঁড়েমুড়ির মোয়া আদি উপাদেয় আহারের সাত্ত্বিক আবাহন বাদে মোটে ঠাঁইনাড়া হতেন না মল্লিকদা। অহোরাত্র সেঁটে থাকতেন ঝুরঝুরে তাঁর মেসবাসার ঝরঝরে তক্তাপোশে।’’ ...স্ব-উদ্ভাবিত আখ্যানে ফের খেয়াল করিয়ে দিলেন শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা কথাসাহিত্যের আধুনিকতা তার ডিটেলস-ভিত্তিতে। পাঠককে তাঁর নতুন দু’টি গল্প পড়ানোর সুযোগ করে দিল হরপ্পা পত্রিকার (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) সদ্যপ্রকাশিত বৈদ্যুতিন পুস্তিকা সমাবেশে সমাবেশ। গল্পদু’টিহরবোলা এবং অনিকেত মিত্র ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ। একদা গোপাল-রাখাল দ্বন্দ্বসমাস: উপনিবেশবাদ ও বাংলা শিশুসাহিত্য লিখে বাঙালি মননকে তোলপাড় করেছিলেন শিবাজী। গ্রাফিক নভেল, নাটক, উপন্যাস, কবিতা, গল্পে তিনি প্রসারিত করে চলেছেন বাঙালির সৃষ্টিভান্ডার। সোমনাথ ঘোষের শিল্প-নির্দেশনায় শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদ-অলঙ্করণ নান্দনিক করেছে পুস্তিকাটিকে, ছবিতে তারই একটি।


আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, অগস্ট ১০, ২০২০
শ্রদ্ধার্ঘ্য

জন্মেছিলেন অবিভক্ত বঙ্গের কলকাতায়, ১৯৩৭-এ। গত ১৪ মে চলে গেলেন আনিসুজ্জামান, বাঙালির আত্মপরিচয় লাভের জন্যে গত শতকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি ছিলেন এক অগ্রণী সৈনিক।... চিন্তাবিদ-শিক্ষক মানুষটি বার বার বলতেন সাংস্কৃতিক বহুত্বের কথা, সাবধান করতেন ‘এক ধর্মসম্প্রদায় যেন অন্য ধর্মসম্প্রদায়ের ওপর প্রাধান্য বিস্তার না করে।’ তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ পেল হরপ্পা পত্রিকার (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) বৈদ্যুতিন পুস্তিকা। লিখেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মিহির সেনগুপ্ত, গোলাম মুস্তাফা, ভূঁইয়া ইকবাল, আহমদ কবির, মহীবুল আজিজ, আখতার হোসেন খান, আহমাদ মাযহার। ‘নির্ভীক সমাজ-বিবেক’ হিসেবে তাঁর অতুলনীয় ভূমিকার কথা লিখেছেন গোলাম মুরশিদ, লেখাটির নাম আমার শিক্ষক আনিসুজ্জামান। সোমনাথ ঘোষের প্রচ্ছদ অলঙ্করণ, শিল্প নির্দেশনা চমৎকার।


এই সময়, মে ৩১, ২০২০
অতিমারীর এই কালে উলাইচণ্ডীর উপাখ্যান

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষিত হয়েছিল মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে। সব কিছু বন্ধ। স্বাভাবিক ভাবেই, শহুরে শিক্ষিত মানুষ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমকে ...বেছে নিল বিনোদনের নতুন উপায় হিসেবে সবই আন্তর্জালে। অন্তরীণ অবস্থার প্রাথমিক অভিঘাত কাটিয়ে তারাও এগিয়ে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বই-পুস্তিকা-পত্রিকা প্রকাশ করতে। গত দু’মাসে ইংরেজি, বাংলা মিলিয়ে। প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু গ্রন্থপত্রিকা। সেই তালিকায় অন্যতম সংযোজন ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকার বৈদ্যুতিন পুস্তিকা। বয়স মাত্র কয়েক বছর হলেও বাংলা প্রবন্ধ-পত্রিকার জগতে ‘হরপ্পা’ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। চতুর্মাসিক সাহিত্যপত্র রূপে ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’এর আত্মপ্রকাশ ২০১৭-র অক্টোবরে । ‘প্রস্তুতি সংখ্যার মধ্যে দিয়ে। মুদ্রণমাধ্যমে বা সাহিত্য-সংস্কৃতি-রীতি-নীতিকে তুলে ধরাই ছিল এর লক্ষ্য। এর পর সিনেমায় ভ্রমণ’, ‘ফোটোগ্রাফি’, ‘দুর্গা’, ‘পুস্তিকা’, ‘সংবাদপত্র’, ‘মাতৃরূপেণ’, ‘গল্পগাছা’— মোট আটটি সংখ্যায় ২০১৭-র অক্টোবর থেকে ২০২০-র ফেব্রুয়ারির সময়কালে। তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালির কর্মোদ্যোগের প্রস্তুতির চিত্র থেকে চলচ্চিত্রে মানসভ্রমণ, বাঙালির পেশাদার ফোটোগ্রাফি চর্চা থেকে। শারদ-উৎসবের খুঁটিনাটি। বাংলা সংবাদপত্রের। বিভিন্ন দিক, দেবী দুর্গার বহুমাত্রিক উপস্থিতির কথা থেকে মৌখিক গল্প-বলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। প্রাথমিক ভাবে ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ ছাপাই মাধ্যমের পত্রিকা। প্রিন্ট ও ডিজিটাল দু’টির উপস্থাপনা ও বিন্যাস অরণ্যষষ্ঠী আঙ্গিকগতভাবে আলাদা হলেও, এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে, ‘হরপ্পা’ ১৪২৭ বঙ্গাব্দের সূচনায় দেশে-বিদেশে অগণিত বাঙালি উলাইচণ্ডী পাঠককে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে প্রকাশ করে বৈদ্যুতিন পুস্তিকা অরণ্যষষ্ঠীর রীতি কী ভাবে বাংলার ব্রতর সঙ্গে জড়িয়ে আছে, কেমন করে সময়ের গতিতে বদল ঘটেছে তার, এবং জামাইষষ্ঠী পালনে কী ভাবে অরণ্যষষ্ঠীর গুরুত্ব ম্রিয়মান হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। পুস্তিকাক্রমের প্রথম সংখ্যা ‘হালখাতা’। কোনও বিনিময়মূল্য ছাড়াই গৃহবন্দি অবস্থায় পাঠকের কাছে পিডিএফ আকারে পাঠ রসদ পৌঁছে দেওয়াই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। সেখানে বৈশাখ মাসে বাঙালির পত্রিকা প্রকাশের ঐতিহ্যের কিছু নমুনা ‘বঙ্গদর্শন’ থেকে মাসিক বসুমতী’ পত্রিকার প্রথম। সংখ্যার চিত্র-সহ তুলে ধরা হয়। এই ক্রমে দ্বিতীয় পুস্তিকা ‘উলাইচণ্ডী প্রকাশিত হয় বুদ্ধপূর্ণিমার দিন। উলাইচণ্ডী বা ওলাইচণ্ডী, ওলাবিবির পুজোর ইতিহাসবিবর্তন, মারণরোগ রোধে তাদের পুজোর বঙ্গ-জুড়ে প্রসার এবং বর্তমানে অতিমারীর করুণ রূপ ফুটে ওঠে পুস্তিকাটিতে। ২৮ মে ২০২০, তিথি হিসেবে জৈষ্ঠমাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে প্রকাশিত ‘অরণ্যষষ্ঠী’ পুস্তিকায় অরণ্যষষ্ঠীর রীতিপ্রথা কী ভাবে বাংলার ব্রত ও প্রথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, কেমন করে সময়ের গতিতে বদল। ঘটেছে তার, এবং জামাইষষ্ঠী পালনে কী ভাবে অরণ্যষষ্ঠীর গুরুত্ব ম্রিয়মান হয়েছে। তা তুলে ধরা হয়েছে। একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, বৈদ্যুতিন পুস্তিকা যেহেতু কম্পিউটার বা মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে পড়া হয়, তাই বড় লেখা বিভিন্ন পরিচ্ছদে ভাগ করে দিলে পাঠকের পড়তে সুবিধা হয়। তিনটি বৈদ্যুতিন পুস্তিকার প্রচ্ছদ করেছেন সৌম্যদীপ ও শিল্প নির্দেশনায় সােমনাথ ঘােষ। পুস্তিকাগুলি যৌথভাবে লিখেছেন সৌম্যদীপ এবং হরপ্পা সম্পাদক সৈকত মুখোপাধ্যায়।



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, ২৩ মার্চ, ২০২০
গল্পগাছা

গল্প যত বার বলা হয়, একটু-একটু করে বদলে যায়, যে হেতু মুখের ভাষার কোনও বাঁধাবাঁধি নেই, যখন যিনি বলেন তাঁর মনোভঙ্গি-ই কথিত গল্পটিকে একটা আকার দেয়। ..."প্রতিদিনের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গল্প বলা বা শোনার সময়টাও...এইটুকু বলা যেতে পারে সভ্যতার ইতিহাসে একটা ঐতিহ্য কখনো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় না।’’ লিখেছেন সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘হরপ্পা/ লিখন চিত্রণ’-এর (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) সাম্প্রতিক ‘গল্পগাছা’ সংখ্যাটির শুরুতেই। সম্পাদকের মতে, ‘‘মুখে-বলা এই গল্প আমাদের বিবর্তনের সাক্ষী, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামের আলেখ্য..."। শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনবদ্য কলমে মহাভারত-এর গল্পগাথা নিয়ে: ‘ধর্ম আছ তুমি কোথায়’, অবতল জীবনের সন্ধানী সুধীর চক্রবর্তীর গভীর নির্জন পথের অভিজ্ঞতা, দেবাশিস বসুর ‘মনে-থাকা গল্পকথা’য় প্রাচীন বাঙালি পরিবারের ইতিহাস, সুনন্দা সিকদারের ময়মনসিংহের গল্প-বলার স্টাইল ও বিবর্তন, শ্যামলী দাসের কাঁথা-র কথা, ভবেশ দাসের বেতারে গল্পের দাদা-দিদি-দাদুরা... এমনই আরও মনকাড়া রচনা মিহির সেনগুপ্ত অশোককুমার কুণ্ডু দীপঙ্কর ঘোষ সত্যশ্রী উকিল কিশোর দাস দেবাশিস গুহনিয়োগী অমিতাভ সেনগুপ্ত ভাস্কর দাস সৌম্যদীপ ও স্বয়ং সম্পাদকের। দৃষ্টিনন্দন শিল্প-অলঙ্করণ ও সোমনাথ ঘোষের প্রচ্ছদে শোভিত গোটা সংখ্যাটি। স্বতন্ত্র ক্রোড়পত্রে: বাংলাদেশের লোককথায় ‘বোকা জামাই’। সঙ্গে পত্রিকার প্রচ্ছদ।



আজকাল, বারান্দা, ২৩ মার্চ, ২০২০
বিষয় গল্পগাছা

গল্প বলা এক শিল্প। আর গল্প শোনারও অনেকগুলো দিক থাকে। তা শুধু বিনোদন বা নিছক সময় কাটানোয় আটকে থাকে না, তার মধ্যে থাকে শিক্ষার নানা উপকরণ। ...সামাজিক বহু গল্পে ধরা থাকে সমসময়। ছোটরা ভালবাসে গল্প শুনতে, প্রবীণরা বলতে। আগে সেই গল্পের পাইকারি জোগানদার ছিলেন ঠাকুরদা, ঠাকুরমায়েরা। কখনও মা-বাবা বা বড় দাদা-দিদিও। ভয়ের গল্পে ক্ষুদেরা গল্পবলিয়ের গা-ঘেঁষে বসত ঠিকই, কিন্তু গল্প শোনা ব্যাহত হত না। এই গল্পের মধ্যে দিয়েই তারা শিখত শিষ্টাচার, ইতিহাস, বিজ্ঞান- কত কিছু। আকাশবাণীতে বসত ‘শিশুমহল’, ‘গল্পদাদুর আসর’। ছোটরা ভারি আগ্রহের সঙ্গে শুনত গল্প, অংশও নিত। এখন নিউক্লিয়ার পরিবার। রেডিও অতীত। মা-বাবা দুজনেই চাকুরে। গল্প বলা বা শোনার পাটও আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। একটা সময়ে গল্প বলে দাদুমণি’র মতো বিশেষ সংখ্যা বেরোত ছোটদের জন্য। গল্প শোনায় ছোটদেরই মৌরসিপাট্টা এমন ভাবাটা ঠিক নয়। বড়রাও গল্প শুনতে, গল্প বলতে ভালবাসে। গ্রামে চণ্ডীমণ্ডপে, বটতলায় কত গল্প হত। কথক ঠাকুররা আসতেন মা-মাসিদের গল্প শোনাতে। সেইরকম গল্পগাছা’ই এবার ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকার ফেব্রুয়ারি সংখ্যার বিষয়। সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস বসু, সুধীর চক্রবর্তী, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যশ্রী উকিল, ভবেশ দাস প্রমুখ কলম ধরেছেন। সম্পাদক সৈকত মুখার্জি নিজেও আছেন লেখক তালিকায়। উঠে এসেছে ময়মনসিংহের গল্প-বলার স্টাইল ও তার বিবর্তন, কথায় কথা, বেতারে গল্পের দাদা দিদি দাদরা। তবে অনেক লেখাই অপ্রাসঙ্গিক ঠেকেছে। ঝকঝকে ছাপা, চমৎকার সব অলঙ্করণ এই পত্রিকার বৈশিষ্ট্য, যা একে আকর্ষণীয় করে তোলে। এবারের সংখ্যাও তার ব্যতিক্রম নয়। অলঙ্করণে পার্থ দাশগুপ্ত, দেবব্রত ঘোষ, ঋতুপর্ণ বসুদের কৃতিত্ব প্রাপ্য।



এই সময়, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
শ্রমসাধ্য, সংগ্রহযোগ্য একটি সংকলন

সৈকত মুখার্জি সম্পাদিত এই পত্রিকাটি এর মধ্যেই সাড়া জাগিয়েছে। শারদ সংখ্যাটির প্রচ্ছদে ‘মাতৃরূপেণ’ লেখা আছে বেশ বড় হরফে, ...প্রচ্ছদশিল্পের নির্দেশনায় সোমনাথ ঘোষ সওয়াই মান সিং-এর সংগ্রহ থেকে একটি দুষ্প্রাপ্য ছবি তুলে দিয়েছেন। সম্পাদক কেবল ডিজিটাল মিডিয়ায় বাঙালির পুজোর বাস্তব অভিজ্ঞতাটিকে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়েছেন। আর এই বাস্তবটি আদতে কতখানি বিস্তৃত এক বিশ্ব, কত গভীরে তার শিকড় প্রোথিত, তার উদাহরণ মেলে সূচিপত্রে চোখ বোলালে। দুর্গাপুজোকে একাধিক মাত্রায় ধরা হয়েছে শুধু না, সেই কাজটির শরীরে যত্ন এবং ভালোবাসার ছবিটিও রীতিমতো ধরতে পারা যায়। দু’মলাটের ভিতরে লেখাগুলি জড়ো করতে এবং যথাযোগ্য ছবি-সহকারে বিন্যস্ত করতে কতখানি খাটুনি দিতে হয়েছে তার সামান্যতম উল্লেখ নেই বটে, তবে আঁচ পেতে অসুবিধা হয় না। সবটি মিলিয়ে যেন বা একটা গবেষণা-পত্র, অনেকে মিলে আলাদা আলাদা কাজ করে জ সবটা, তাই পড়তে গিয়ে একঘেয়েমির ভয় নেই। হরপ্পা। তৃতীয় বর্ষ। প্রথম সংখ্যা। ২৫০ টাকা



আজকাল, রবিবাসর। বই, ২০ অক্টোবর ২০১৯
হারিয়ে যাওয়া ঠাকুরদালান

আক্ষরিক অর্থেই বাঙালির উৎসব বা পার্বণ ছিল নবান্ন, গাজন ইত্যাদি। সেইখান থেকে সবাইকে খেদিয়ে বাজারে দুর্গার মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসার কাহিনী রীতিমতো গবেষণার্হ।...রাজামহারাজ থেকে কর্পোরেট দাক্ষিণ্যে বলীয়ান হয়েছেন দুর্গা। তাঁর দু হাত ক্রমশ চার, ছয় হয়ে বাড়তে বাড়তে দশে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দু হাতি দেবদেবীরা ফিকে হয়ে গিয়েছেন। যত দিন যাচ্ছে দুর্গাপুজো বাঙালিজীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। সেই শারদোৎসব উপলক্ষে পত্রপত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের রেওয়াজ অনেক দিনের। পাঠবিমুখ বাঙালি এখনও পুজোসংখ্যাকে পরিত্যাগ করেনি। খবরের কাগজ যিনি দেন তাঁকে আগে থেকে দেওয়া বরাত অনুযায়ী বড় পত্রিকা গোষ্ঠীর পত্রিকা চলে আসে। বইয়ের স্টল থেকেও কেনা হয় অন্য পত্রপত্রিকা। ছুটির কদিন কাগজ থাকে না, ঘোরাঘুরির ফাঁকে পুজোসংখ্যাই অবসর বিনোদনের উপকরণ। অনেক পত্রপত্রিকার ভিড়ে স্বতন্ত্রতায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে ‘হরপ্পা: লিখন চিত্রণ’। সৈকত মুখার্জি সম্পাদিত পত্রিকাটি প্রতি সংখ্যাই করে বিষয়ভিত্তিক, যা সংগ্রাহকদের ভারি পছন্দের কারণ হয়ে ওঠে। পত্রিকার অক্টোবর ২০১৯, তৃতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা শারদ-বিষয়ে। শিরোনাম ‘মাতৃরূপেণ’, মানে মা দুর্গাই। রাস্তারোধী বারোয়ারি পুজো যতই দাপাদাপি করুক, মা দুর্গা সম্ভবত এখনও স্বস্তিবোধ করেন ঠাকুরদালানের নিভৃত আন্তরিকতায়। পারিবারিক পুজোয় তিনি এখনও অবতীর্ণ হন ঘরের মেয়ের ভূমিকায়। কলকাতা তথা বিভিন্ন জেলায় জমিদারবাড়ি বা বনেদিবাড়িতে তাঁর বাৎসরিক আবাহনের জন্য তৈরি হত ঠাকুরদালান। সেখানেই গড়া হত প্রতিমা, তারপর পুজো। বিজয়ায় সিঁদুরে হুল্লোড় নয়, বাজত বিষাদের সুর। জমিদারির দিন গেছে। বনেদি পরিবারগুলোর পুজোও অর্থনৈতিক ওঠাপড়ার কারণে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। বহু ঠাকুরদালান প্রতিমাহীন, কেউ জরাগ্রাসে। দেবাশিস বসু পেশায় চিকিৎসক, নেশায় কলকাতা গবেষক। তিনি বহু শ্রমে ও যত্নে সেই হারিয়ে যাওয়া ঠাকুরদালানের ইতিহাস উদ্ধার করে এনেছেন। অক্টোবর সংখ্যার বিশেষ আকর্ষণ তাঁর ‘অবলুপ্ত ঠাকুরদালান ২’। আগের লেখার খেই ধরে এই সংখ্যায় লিখেছেন জয়মণি সেন, যোগেন্দ্রনাথ বসুমল্লিক ও কালীশংকর ঘোষের ঠাকুরদালানের কথা। স্থাপত্যকীর্তিতে, গরিমায় এই ঠাকুরদালানগুলো ছিল ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়, বহু সামাজিক ওঠাপড়ার সাক্ষী। ব্যবসা এবং নানা উদ্যোগের জেরে জয়মণি, যোগেন্দ্রনাথ, কালীশংকররা ছিলেন বৈভবের শীর্ষে। তাঁদের কীর্তিকলাপের কথা লোককথায় পরিণত হয়েছিল। লেখার সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া সেই সব ঠাকুরদালানের সাদাকালো ছবি বিশেষ প্রাপ্তি। এছাড়াও পটের ছবি, দশাবতার তাস, সাহেবদের পুজো, আলপনা, কলের গানে আগমনী, দুর্গাপুজোর শুভেনির, মহিষাসুর ইত্যাদি দেবী দুর্গাকে ঘিরে বিবিধ বিষয় নিয়ে চমৎকার সব লেখা জোগাড় করেছেন সৈকত। লেখক তালিকায় আছেন সুধীর চক্রবর্তী, অজয় কোনার, দীপঙ্কর ঘোষ, গৌতম হালদার, কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত, সমতা মুখার্জি, সাহাবুদ্দিন প্রমুখ। সুন্দর কাগজে ঝকঝকে ছাপা পত্রিকাটিকে আকর্ষণীয় করেছে। সোমনাথ ঘোষ মনকাড়া প্রচ্ছদ করেছেন। হরপ্পা: লিখন চিত্রণ • সম্পাদক সৈকত মুখার্জি • ২৫০ টাকা



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
মাতৃরূপেণ

শারদীয় পত্রিকার বড্ড ভিড় এখন। গল্প কবিতা উপন্যাস ইত্যাদির সঙ্গে প্রবন্ধ শীর্ষক দু’একটি রম্যরচনা, ব্যস। লিটল ম্যাগাজিন আবার কোনও কোনওটি ভীষণ রাশভারী, পাতার পর পাতা গুরুগম্ভীর লেখায় ঠাসা।...পড়তে পড়তে হাঁপ ধরে যায়, চোখ একটুও বিশ্রাম পায় না। ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ (সম্পা: সৈকত মুখার্জি, পরি: অক্ষর প্রকাশনী) নেহাতই ব্যতিক্রম। ম্যাট আর্ট পেপারে ছাপা, প্রায় প্রত্যেক পাতায় সুমুদ্রিত সাদাকালো ছবি— প্রায় ২৫০ পাতার পত্রিকা দুর্গাকে কেন্দ্রে রেখে বহু বিচিত্র লেখায় সমৃদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে শরৎ ঋতুর পাশাপাশি কলকাতার ক’টি অবলুপ্ত ঠাকুরদালানের ইতিবৃত্তান্ত, জয়পুর সংগ্রহের ‘দুর্গাপাঠ’ পুঁথির চিত্রকথা, পটের দুর্গা, পুজোর সুভেনির, কলের গানে আগমনি, শোলাশিল্প, হিন্দুতীর্থ ও বাঙালিনি থেকে মহিষাসুরের কথা— এমনই বিপুল সম্ভার। এত শিল্পিত পত্রিকা বাংলাবাজারে দুর্লভ।



আজকাল, বারান্দা, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
বিষয় যখন খবরের কাগজ

সেই পঞ্চানন কর্মকারের ছেনি-খোদাই করা অক্ষর, কাঠের ব্লক, মোনো, লাইনো, পিটিএস থেকে ডিটিপি ছাপাখানার উত্তরণ ঘটেছে দ্রুত গতিতে। আর এই গতিময়তার কারণ সংবাদপত্র, ...আর যেখানে সময়ই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। ওদিকে ট্রেডল মেশিন থেকে অফসেট, ডিটিপি— নিত্য নতুন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। সংবাদপত্রকে ধরে সেই ছাপাখানা বৃত্তান্তই এবার ‘হরপ্পা লিখনচিত্রণ’ পত্রিকার বিষয়। জেমস হিকি থেকে এখনকার সংবাদপত্র, লাইনো টাইপ থেকে ডিটিপি— তথ্যের ছড়াছড়ি গোটা পত্রিকায়, আছে বিস্তর ছবিও। সংবাদপত্রে প্রথম বড় বিপ্লব বলা হয় লাইনোটাইপ প্রযুক্তিকে। সিসে গলিয়ে কম্পোজ হওয়া পুরো এক লাইন—তা থেকেই লাইনো কথাটার উদ্ভব। রাজশেখর বসু থেকে শিল্পী যতীন্দ্রকুমার সেনের অবদান তাতে অনেকখানি। বাংলা সংবাদপত্র জগতে বিপ্লব আনে। অভিজ্ঞ সাংবাদিক, শিল্পী বা বিশেষজ্ঞরা কেউ লিখেছেন সংবাদপত্রের ভেতরের কথা, কেউ খবর, কেউ বিন্যাস নিয়ে। এসেছে ইতিহাস, বিশেষ উল্লেখ্য ঘটনার কথাও। সৈকত মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ঝকঝকে ছাপা এবং প্রচুর তথ্য সমন্বয় পত্রিকাটিকে উৎসাহীদের কাছে সংগ্রহযোগ্য করে তুলেছে। সঙ্গে উপরি পাওনা একটি চমৎকার ক্রোড়পত্র। বিষয় ‘লাইনোটাইপ থেকে ডিজিটাল’।



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
সংবাদপত্র

বাংলা সংবাদপত্রের প্রকাশনা দু’শো বছর পেরিয়েছে। কিন্তু উনিশ শতকের পত্রপত্রিকা নিয়ে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে স্বপন বসু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করলেও বিশ শতক এখনও অবহেলিত। ...সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গিয়েছে স্বাধীনতা-পূর্ব অধিকাংশ বাংলা সংবাদপত্রের (বিশেষত দৈনিক) ফাইল। সিকি শতক আগে ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাব ‘কলকাতার বিলুপ্ত দৈনিক’ শিরোনামে কিছু সংবাদপত্রের তথ্য সঙ্কলন করেছিল। এ বার ‘হরপ্পা/লিখন চিত্রণ’ (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) তাদের ‘সংবাদপত্র’ সংখ্যায় এই ইতিহাসের অনেক আলগা সূত্রে গ্রন্থি বাঁধতে পেরেছে। যে তথ্য এখানে সঙ্কলিত রইল, তা ভবিষ্যৎ গবেষণার অমূল্য উপকরণ। যেমন সাংবাদিক চিত্রী ডিজ়াইনাররা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখেছেন প্রিন্ট থেকে ডিজিটাল: সংবাদমাধ্যমের যাত্রাপথের কথা। অতীত জীবন্ত হয়েছে হিকিজ় গেজ়েট, ক্যালকাটা গেজ়েট কি হিন্দু পেট্রিয়ট, গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা-র কথায়। আছে চিঠিপত্র, শোকসংবাদ, ভ্রম-সংশোধন, আলোকচিত্রের সঙ্গে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ প্রসঙ্গ, জেলার সংবাদপত্রের দুর্লভ বিবরণ। সঙ্গে ক্রোড়পত্রে হরফশিল্পী রিকার্ডো ওলোকো-র বাংলা হরফের পরিবর্তন বিষয়ে গবেষণাপত্রের অনুবাদ। এ পত্রিকার সম্পদ বিপুল চিত্রসম্ভার, চমৎকার লে-আউট ও মুদ্রণমান।



দেশ, বইয়ের জানালা ১৭ মে ২০১৯
পুস্তিকার ইতিহাস

হরপ্পা লিখন চিত্রণ ‘ পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যার বিষয় ‘পুস্তিকা। সম্পাদক সৈকত মুখোপাধ্যায়। বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যাওয়া বঙ্গসমাজের কিছু মূল্যবান দলিলকে পুনরায় পাঠকের...সামনে তুলে ধরাই এই সংখ্যার লক্ষ্য। উদ্ধৃতি, প্রাসঙ্গিক চিত্র, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ-সহ রয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পুস্তিকা সম্বন্ধে আলোচনা।



আজকাল, ২০ এপ্রিল, ২০১৯
নামে পুস্তিকা, আসলে সমাজের আয়না

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়, গোপাল ভাঁড়ের গল্প, লক্ষ্মীর পাঁচালী, স্পোকেন ইংলিশ শিক্ষা ইত্যাদি হাঁক দিয়ে ট্রেনে-বাসে পাঁচ আঙুলের ফাঁকে পাঁচটি বই ধরে কোনও হকার কিছু চটি বই বিক্রি করছেন,...এ আমাদের কাছে পরিচিত দৃশ্য। অথবা মোবাইল ইন্টারনেটের বাড়বাড়ন্তের আগে প্রায়শই খবরের কাগজের ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসত পাতলা একটা বিজ্ঞাপনের বই। সস্তার নিউজ প্রিন্ট, সাদা-কালো অথবা দু রঙে ছাপা, দু-তিন ফর্মার বইগুলিকে বই না বলে পুস্তিকা বলাই শ্রেয়। কী এই পুস্তিকা, কী তার ইতিহাস, বইয়ের সঙ্গে তার তফাত কোথায় ইত্যাদি নানা তথ্য নিয়ে ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকা তাদের সাম্প্রতিকতম সংখ্যাটি প্রকাশ করেছে। ২৪টি পুস্তিকা বিষয়ক লেখা নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকাটি নিঃসন্দেহে উচ্চকিত প্রশংসার দাবি রাখে। কেবল বিষয় নির্বাচন নয়, উপস্থাপনও অনবদ্য। বিষয়ক্রম অনুসারে যেভাবে পত্রিকাটি সাজানো হয়েছে তাতে পাঠকের পুস্তিকা বিষয়ক ধারণা আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। শুরুর লেখাটিই হল, ‘পুস্তিকা: উদ্ভব-বিস্তারের আদিপর্ব’। ক্ৰমে পুস্তিকা বিষয়ক নানা বিচিত্র লেখা পাওয়া যাবে পত্রিকাটিতে। সেখানে রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী সংক্রান্ত দুটি পুস্তিকা, রেসের বই, ধর্মবিষয়ক পুস্তিকা, কয়েকটি অপরিচিত ব্রাহ্ম পত্রিকা, উনিশ শতকের পুস্তিকায় পতিতোদ্ধার অথবা বিজ্ঞানবিষয়ক পুস্তিকা— নানা বিষয় উঠে আসে। বরুণ চট্টোপাধ্যায়, সুধীর চক্রবর্তী, দেবাশিস বসু, ধ্রুবজ্যোতি নন্দী, অরিন্দম দাশগুপ্ত, গৌতম বসুমল্লিক, কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত প্রমুখের লেখা নিঃসন্দেহে পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। এই সমস্ত লেখা থেকে পাঠক পাবেন পুস্তিকা বিষয়ক সুস্পষ্ট ধারণা। যেমন সুধীর চক্রবর্তীর লেখায় উঠে আসে সিনেমার গানের পুস্তিকার কথা, তেমনই আবার গৌতম বসুমল্লিক লিখেছেন থিয়েটারের ইতিহাস খুঁজে বের করতে সে সময় থিয়েটারের টিকিটের সঙ্গে বিলি করা ছোট পুস্তিকাগুলির ভূমিকার কথা। দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের লিখছেন ভারতীয় রেলের সুদীর্ঘ ইতিহাসচর্চায় পুস্তিকার ভূমিকা অথবা সুমন ভট্টাচার্যের লেখায় পাঠক বুঝতে পারবেন ব্রাহ্মণ্যবাদের মুখপত্র কীভাবে হয়ে উঠেছিল একেকটি চটি বই। সৈকত মুখার্জি তাঁর লেখায় তুলে ধরেছেন পুস্তিকায় খুঁজে পাওয়া ‘ছোট পরিসরে সমাজ চিত্রণ। কেবল বিষয় নির্বাচন অথবা বিষয় বৈচিত্র্যেই নয় ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণে’র এই সংখ্যাটিতে ছোট্ট সম্পাদকীয়টি এবং সোমনাথ ঘোষের শিল্পনির্দেশনা পত্রিকাটিকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। চমৎকার প্রচ্ছদ আর প্রায় প্রতিটি লেখার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে পাতার ডানে অথবা বাঁয়ে নানান পুস্তিকার ছবি দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে বিরল কিছু পুস্তিকার ছবি পাঠককে বিস্মিত করবে সন্দেহ নেই। পাঠক সহজেই ধারণা করতে পারবেন বিশ্ববিদ্যা সংগ্রহ, পেটের অসুখ সারান অথবা বেশ্যা গাইড সবটাই পুস্তিকারই বিচিত্র রূপ। পুস্তিকা মানে যে আসলে যে বানান ভুলে ভরা সস্তার কালি-কাগজে ছাপা চটিবই নয়, অথবা পার্টির ইস্তেহার, বারোমাসের ব্রতকথা কিম্বা কুন্তলিনী তৈলের বিজ্ঞাপন নয়, পুস্তিকা যে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি আর মনোরঞ্জনের দলিল, তা যে অনেক সময়েই সংগ্রহে রাখার মতো সম্পদ, সে সম্পর্কে পাঠককে এই সংখ্যাটি সচেতন করে তুলবে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে এই পত্রিকায় বাড়তি পাওনা অসিত পালের সংগ্রহ থেকে পি এম বাকচি-র ‘আজব হলেও সত্যি’ বলে কালির ইতিহাস সমৃদ্ধ ছোট পুস্তিকা। যা আগ্রহী পাঠকের কাছে সযত্নে সংগ্রহে থাকার মত।
হরপ্পা লিখন চিত্রণ • সম্পাদক সৈকত মুখোপাধ্যায় • ২৫০ টাকা



এই সময়, ১০ মার্চ ২০১৯
কালের যাত্রার দিকে তথ্যনিষ্ঠ দৃষ্টিপাত

গ্রন্থজগৎ, সাধারণ ভাবে, কুলীনকুলসর্বস্ব। দর্শনে ও গুণে জাতকৌলীন্য সেখানে খুবই প্রভাবশালী। তথাচ, পাতলাকারে কিছু ছোটখাট বই যে বিভিন্ন সময় জনচিত্ত হরণ ... গ্রন্থজগৎ, সাধারণ ভাবে, কুলীনকুলসর্বস্ব।...দর্শনে ও গুণে জাতকৌলীন্য সেখানে খুবই প্রভাবশালী। তথাচ, পাতলাকারে কিছু ছোটখাট বই যে বিভিন্ন সময় জনচিত্ত হরণ করেছে, এমনকী চিন্তাজগতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা-ও ঘটনা। ভাবনার সেই প্রেক্ষিতটুকু স্মরণে রেখে ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যাটি অবশ্যপাঠ্য। অবশ্য দর্শনীয়ও বটে। সৈকত মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এই সাময়িকপত্রটি মাত্রই দ্বিতীয় বর্ষে উপনীত, তবু ভাবনামহলে নিজস্ব একটি স্থান করেছে নিজগুণে। নিশ্চিত, ‘পুস্তিকা’ বিষয়ে ‘হরপ্পা’র ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সংখ্যাটি (মূল্য ২৫০ ) সেই সুনামকে বর্ধিত করবে আরও। ভঙ্গ বঙ্গের পশ্চিম ভাগে সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে যেটুকু চর্চা, তা যে তথ্যের প্রতি অতীব বিশ্বস্ত, এমন দাবি করা কঠিন। বরং, কিছু স্বাদু এবং অনুকরণীয় ব্যতিক্রম বাদ দিলে মুখ্যত স্বকপোলকল্পনার আধিক্যই চোখে পড়ে বেশি। অথচ, ইতিহাসের ফেরফার কী ভাবে ছায়া ফেলেছে সংস্কৃতির পাড়ায়, তা বিশ্লেষণ করার জন্য তথ্যনিষ্ঠ হওয়াই সবচেয়ে জরুরি। তত্ত্বায়নে দোষ নেই ঠিকই, কিন্তু সেই তত্ত্বচারণা যদি প্রাপ্ত নথিতথ্যের ভিতে না দাঁড়ায়, খটকা জাগে, ভাবুকটি নিছক তত্ত্ব-মত্ত নন তো? আলোচনায় বিষয়সূচির বিস্তৃত উল্লেখ সর্বদা বাঞ্ছিত না হলেও এ ক্ষেত্রে জরুরি। তাতে পরিকল্পনার ব্যাপ্তিটি ধরা যাবে। জাতপাত, পতিতোদ্ধার, রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী, রেসের বই, রেল-পুস্তিকা- এমন বহুবিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে আলো ফেলা হয়েছে পুস্তিকার দিকে। আছে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ও। তার সঙ্গে ক্ষীণতনু বই বিষয়ে সাধারণ আলোচনা এবং ব্যক্তিগত স্মৃতি। প্রতিটি পাতায় প্রাসঙ্গিক ছবি-সহ অতি সুনির্মিত সংখ্যাটির জন্য শিল্পনির্দেশক সোমনাথ ঘোষেরও পৃথক সাধুবাদ প্রাপ্য।



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, ৪ মার্চ , ২০১৯
পুস্তিকা

ফিনফিনে মলাটের পাতলা বই। একটা তো সবার চেনা, বর্ণপরিচয়। কিন্তু বাংলা মুদ্রণের প্রায় আড়াই শতকের ইতিবৃত্তে এমন আরও কত ‘পুস্তিকা’ যে বেরিয়েছিল, তার খোঁজ আমরা রাখার চেষ্টা করিনি ...বড় গ্রন্থাগারেও এই সব ‘চটি’ বই গুরুত্ব পায়নি। অথচ ব্যক্তি পরিবার অঞ্চল থেকে সংবাদ সমাজ সংস্কৃতি বিনোদন ইত্যাদি কত না মাত্রা রয়েছে এর। জয়ন্ত গোস্বামী কি বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় সে পরিচয় কিছুটা ধরে রেখেছেন। ‘হরপ্পা/ লিখন চিত্রণ’ পত্রিকা (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) এ বার পুস্তিকার এই বহুমাত্রিক চরিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। পুস্তিকার উদ্ভব থেকে শুরু করে অভিনয় পুস্তিকা, ধর্মপুস্তিকা, ব্রাহ্ম-পুস্তিকা, পুস্তিকায় জাতপাত, শিল্প, বিজ্ঞান, ভ্রমণ, রেল, পতিতোদ্ধার, চৌদ্দ আইন, নীহার প্রেসের পুস্তিকা— কী নেই। রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী সংক্রান্ত পুস্তিকা সূত্রে উঠে এসেছে নানা অজানা তথ্য। আবার কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রসঙ্গে আছে চমৎকার বিশ্লেষণী আলোচনা। সঙ্গে পি এম বাক্‌চির পুস্তিকা ‘আজব হলেও সত্যি’র হুবহু প্রতিমুদ্রণ।



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা ১৫ অক্টোবর, ২০১৮
শারদীয়

সে ঢাকও নেই, ঢাকিও অবলুপ্তির পথে। ঢাকের খোল এখন ধাতুর পাতে তৈরি, আর ছাওয়া সিন্থেটিক ফাইবারে। ‘হরপ্পা/ লিখন চিত্রণ’ (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় লিখেছেন সমতা মুখোপাধ্যায়। ...দুর্গাকে কেন্দ্র করে বিচিত্র সব বিষয়, আর তেমনই পাতায় পাতায় আশ্চর্য ছবির সম্ভার! শুরুতেই সুধীর চক্রবর্তীর স্বাদু স্মৃতিচারণ, প্রণতি মুখোপাধ্যায়ের কলমে ক্ষিতিমোহন সেনের সর্বরূপময়ী দেবীর ভাবনা, ঠাকুরদালান নিয়ে দেবাশিস বসু, অশোককুমার দাসের ‘মুঘল চিত্রকলায় দেবী’, অসিত পালের ‘কাঠখোদাইয়ে দুর্গা’, মূর্তিরূপ, পুরোহিত, পুজোর ফর্দ, রুশি বই, পুজোর ছবি, বিজ্ঞাপন, আগমনি গান, কত কী। সঙ্গে আরও অরূপরতন— গ্রিক রূপকথা নিয়ে হীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুশোভন অধিকারীর ব্রতের আলপনা, শ্যামল বেরার লক্ষ্মীপুরাণ, অর্ণব নাগের কুলদেবতার কুলুজি আর পান্ডার খাতা নিয়ে শেখর ভৌমিকের অনুসন্ধান। কিছু মুদ্রণপ্রমাদ বাদ দিলে অনবদ্য শারদীয়।



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
বাঙালির ছবি তোলা

অনেক খদ্দের তাঁদের মা বা স্ত্রী-র পুরোনো ফোটো আনতেন, যা-তে কেবল তাঁদের মুখটুকুই আবছা দেখা যায়। এই মুখকে আরেকটি ফোটোর কাঁধে বসিয়ে একটা সম্পূর্ণ ছবি তৈরি করা হত। মহিলার কাঠামো অনুযায়ী মা ...কিংবা জেঠিমা মডেলের কাজ করতেন।’’ লিখছেন হাংরি আন্দোলনখ্যাত সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। সৈকত মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হরপ্পা লিখন চিত্রণ’ পত্রিকার সাম্প্রতিক ফোটোগ্রাফি সংখ্যায় তাঁর ‘ফোটোগ্রাফার পূর্বপুরুষদের গল্প’ তুলে এনেছে ভারতীয় ফটোগ্রাফির ইতিহাসে বিস্মৃত ব্যক্তিত্ব লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী (১৮৬৬-১৯৩৩) আর তাঁর উত্তর প্রজন্মের কথা। পত্রিকার ফোকাস পেশাদার আলোকচিত্রীদের উপর, রঘু রাই বাদে যাঁরা সকলেই বাঙালি। রঘু রাই, নিমাই ঘোষ, অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়, তপন দাস, সনৎ ঘোষ, রনি সেন মুখোমুখি আলাপচারিতায় উজাড় করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আছেন ‘ছায়াজগতের স্থিরচিত্রের চিত্রগ্রাহক’ সুকুমার রায় (সঙ্গে তাঁরই তোলা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শুটিংয়ে সত্যজিৎ-সৌমিত্র-শর্মিলা), বাণিজ্যিক ছবির বিবেক দাস, খবরের শিরোনামে চলে আসা বাংলাদেশের শহীদুল আলম, সত্যেন মণ্ডলের মতো প্রবীণের পাশাপাশি নবীনরাও। আছেন ডার্করুমে সাদাকালোর সংস্কৃতিকে এখনও টিকিয়ে রাখা বিকাশ বসু, কিংবা ডিজিটাল প্রযুক্তির কাছে মাথা না-নুইয়ে চুপচাপ বিদায় নেওয়া জ্যোতিষ চক্রবর্তী। আছে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্টুডিয়োর কথা— দার্জিলিঙের দাস স্টুডিয়ো কি রানাঘাটের ডি এন মিত্র, কলকাতার বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড, সি গুহ, ডি রতন ও সি ব্রাদার্স। অভীককুমার দে-র ‘মানববিজ্ঞান বিভাগের ফোটো-ইউনিট’ ও সত্যশ্রী উকিলের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ফোটো-ইউনিট’-এর কথা প্রাতিষ্ঠানিক আলোকচিত্র চর্চার আভাস দেয়। পেশাদার আর নেশাদারদের নিয়ে চমৎকার স্মৃতিকথন দেবাশিস বসুর, অরুণ নাগের ‘টুকরো চিন্তা’য় ছবি তোলার নানা দিক, সাহিত্যে ছবি-তোলা সুমন ভট্টাচার্যের লেখায়। তথ্যসমৃদ্ধ লেখার পাশাপাশি বহু দুর্লভ ছবির নিখুঁত মুদ্রণে বাঙালির আলোকচিত্র চর্চার জগৎ কিছুটা অন্তত ধরা রইল এ সঙ্কলনে।



আজকাল, বারান্দা, ৯ অক্টোবর, ২০১৭
হরপ্পা

প্রকাশিত হল নতুন এক পত্রিকা— ‘হরপ্পা: লিখন, চিত্রণ’। বিন্যাসে, বিষয় নির্বাচনে অন্য ধরনের। মুখড়ায় সম্পাদক সৈকত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পত্রিকার লক্ষ্য, ...সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টির হারিয়ে যাওয়া বা সময়ের স্রোতে ভুলে যাওয়া ধারাকে হালফিল সংস্কৃতির সঙ্গে দু মলাটে তুলে ধরা। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো।’ সন্দেশের প্রস্তুতি পর্ব, সাজঘরের ছবি, কলিকাতা অনাথ আশ্রম, রবীন্দ্র-চিত্রকলার প্রস্তুতি পর্ব, ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রস্তুতি পর্ব থেকে জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসকে নিয়ে লেখা উপেক্ষিত অভিধান-নায়ক, বাঙালির কলের গান—বিষয় বৈচিত্র্য দেখার মতো। উপরি পাওনা দেবব্রত ঘোষ, সুব্রত চৌধুরি, অনুপ রায় প্রমুখের ছবি। আর্ট পেপারে ঝকঝকে ছাপা, সঙ্গে দুর্দান্ত অলঙ্করণ পত্রিকার আকর্ষণ বাড়িয়েছে। একেবারে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু বলা যায়। চলুক পানসি বেলঘরিয়া।



আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতার কড়চা, ১৬ অক্টোবর, ২০১৭
হরপ্পা

‘এক রবিবারের সকালে হানা দিয়েছিলাম নরেনদার লিন্টন স্ট্রিটের ঠিকানায়। মার্চ মাস... দেখি, নরেনদা গেঞ্জি-গায়ে একমনে লিখে চলেছেন...’, পুজোর জন্য ছোটগল্প শেষ করছিলেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র। ...বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখালেখির প্রস্তুতিপর্ব নিয়ে লিখেছেন প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়। এ ভাবেই দেশভাগ, কলের গান, রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকা, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, মাইহার ব্যান্ড, শখের গোয়েন্দা, সন্দেশ পত্রিকা, অক্ষর-ছাপা, বিজ্ঞাপন... এ রকম নানা কিছুর প্রস্তুতি নিয়ে রচনার সমাহারে দু’মলাটের মধ্যে সেজে উঠেছে ‘হরপ্পা’ (সম্পা: সৈকত মুখোপাধ্যায়) পত্রিকা-র প্রথম সংখ্যা। মুদ্রণে অতীব পরিপাটি এ-পত্রের নামাঙ্কন, প্রচ্ছদ, শিল্পনির্দেশনা সোমনাথ ঘোষের। ‘ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো’ই এর লক্ষ্য, জানানো হয়েছে মুখড়া-য়। সঙ্গে তারই প্রচ্ছদ।


গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে দুটি সংখ্যার জন্য মোট সাতশো টাকা দিতে হয়। (অতিরিক্ত ডাকমাশুল লাগবে না)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।

সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
•হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশন, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
•পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
•পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।

মুদ্রিত সংখ্যা
হরপ্পার যাত্রা শুরু ২০১৭-র অক্টোবর মাসে চতুর্মাসিক পত্রিকা হরপ্পা লিখন চিত্রণ-এর প্রকাশলগ্নে। মূলত সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে হরপ্পা আত্মপ্রকাশ করে বাংলার শিল্পসংস্কৃতি আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতি পালাপার্বণ প্রভৃতি নানা বিষয়কে দু-মলাটের ভিতর নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার লক্ষ্যে।

halkhata

সাম্প্রতিক সংখ্যা

jatrarath
পুজোর বই

ষষ্ঠ বর্ষ, প্রথম় সংখ্যা


বই
(পঞ্চম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা)

bangalir_banijya
বাঙালির বাণিজ্য
(পঞ্চম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা)

বৈদ্যুতিন পুস্তিকা
করোনার আক্রমণে অন্তরীণ অবস্থায় ১ বৈশাখ ১৪২৭ থেকে ‘হরপ্পা’-র বৈদ্যুতিন পুস্তিকা প্রকাশের সূচনা। এই পুস্তিকা নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

halkhata

পুরোনো পুস্তিকা

jatrarath
যাত্রারথ

৩০ জুন ২০২০


পিঞ্জরে বসিয়া...
৫ জুন ২০২০

mahalayar jataka
মহালয়ার জাতক
১ জুন ২০২০