<Transparent Logo
Scroll down

galpogachha

গল্পগাছা
তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা

গল্প-বলা আর গল্প-শোগল্প-বলা আর গল্প-শোনা খুব প্রাচীন অভ্যাস। এই গল্প-বলার নানা রকমসকম ধারা চালু ছিল বঙ্গদেশে অনেক আগে থেকেই। সন্ধেবেলায় অবসরে সারাদিন কর্মব্যস্ত মানুষেরা গল্পের ঝুলি খুলে বসে পড়তেন কারোর বাড়ির দালানে কিংবা চণ্ডীমণ্ডপে। তার আগে দুপুরবেলা বউ-ঝিরা গেরস্থালি কাজের ফাঁকে সেরে নিত গল্পগাছা। রাতে শোয়ার সময় বাড়ির খোকা কিংবা খুকুটি বায়না জুড়ত গল্প-শোনার। এমনই জনপ্রিয় ছিল গল্প-বলা বা গল্প-শোনার ঐতিহ্য।...

কী আছে ভিতরে

এক ছিল গ, এক ছিল ল আর এক ছিল প—তিন ভাই৷ গ বড়ো, প মেজো আর ল ছোটো৷ একদিন তিনজনে বেড়াতে বেরোল৷ খানিক যেতেই ছোটোভাই ল-এর হল পায়ে দারুণ ব্যথা৷ সে তাই গ-কে বলল, “আমায় কোলে নাও, দাদা৷ আর যে পারি না হাঁটতে৷” গ রাজি হল না৷ কিন্তু প-এর বড়ো মায়া হল৷ সে বলল, “আয় ভাই, আমি তোকে কোলে নিই৷” ল উঠল প-এর কোলে৷ পথ-চলা শুরু হল গল্পের৷
এটাও তো গল্প। এরকম গল্প আমরা ভালোভাবে কথা বলতে শেখার আগে থেকেই শুনছি, আর সেই গল্প শুনে-শুনেই তো আমাদের মুখে-খই৷ এই গল্প-বলা শুরু হয়েছিল সম্ভবত সৃষ্টির পর থেকে, আদমের নিঃসঙ্গতা ভাঙতে ইভের এ পৃথিবীতে আগমনের মুহূর্তে। কিন্তু কী ছিল সেই গল্প— তা কেউ জানে না৷ গল্প যখন তখন অনুমান করাই যায়: পৃথিবী সৃষ্টির গল্প, গাছের গল্প, পাখির গল্প, পশুর গল্প, গল্পের গোরু গাছে ওঠার গল্প এবং অবশ্যই ভালোবাসার গল্প৷
‘গল্প’ শব্দটির চল কিন্তু বেশিদিনের নয়৷ ভাষাবিদ সুকুমার সেন গল্পের গাঁটছড়া-য় ‘সাহিত্যর শিশু, শিশুর সাহিত্য’ নামক প্রবন্ধে বলেছেন: “শব্দটি বাংলা এবং নিতান্ত আধুনিক৷ বিগত শতাব্দীর মধ্যভাগের আগে শব্দটির ব্যবহার পাইনি ছাপায়৷ তবে মুখে-মুখে যে চলত তাতে সন্দেহ নেই৷”
মুখে-মুখে চলা এই গল্পের মধ্যে রয়েছে আমাদের বিবর্তনের কাহিনি ইতিহাসের উপাদান হিসেবে৷ গুরু তাঁর শিষ্যদের উপদেশ দিয়েছেন, নীতিকথা শিখিয়েছেন গল্পের ঢঙে৷ রাজা-বাদশাহরা বিনোদন হিসেবে গল্প-শোনার নেশায় সভায় গল্পকথক রেখেছেন৷ খেটেখাওয়া মানুষেরা গল্প করতে-করতে কাজ করেছেন মাঠেঘাটে৷ কাজের শেষে শ্রান্ত শরীরের ঘরে ফিরে আবার বসেছেন নিজের মহল্লার সান্ধ্য গল্পের মজলিশে৷ পুকুরঘাটে-কলতলায় দুপুরে কাজের ফাঁকে গল্পে মশগুল হয়েছেন হেঁশেল-ঠেলা গিন্নিরা৷ ঘরের শিশুকে গল্প বলে শান্ত রেখেছেন মা-ঠাকুমা-দিদিমারা৷
গল্পের যথার্থ প্রতিশব্দ, শ্রীসেনের মতে, ‘কথা’৷ উল্লেখিত প্রবন্ধে তিনি বিশদে বলেছেন, “‘কিম’ শব্দে ‘থা’ প্রত্যয় যোগ করে এই বৈদিক অব্যয় পদটি [কথা] নিষ্পন্ন। অর্থ হল, কেমন করে? কিসে? তারপর? এর অনুরূপ পদ হল ‘যথা’, ‘তথা’, ‘সর্বথা’, ‘অন্যথা’ ইত্যাদি। পদটির বিশেষ্যরূপে প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ‘কথােপকথন’ অর্থে। সেই অর্থ থেকে দাঁড়িয়ে যায় ‘গল্প’। (কেননা গল্প শোনবার সময়ে শ্রোতা আগ্রহসহকারে জিজ্ঞাসা করে, কি করে হল?’ ‘তারপর?')৷”
মানুষের এই আগ্রহের কারণে আখ্যান, উপাখ্যান, আখ্যায়িকা, রূপকথা, নীতিকথা, লোককথা প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে গল্প/কথা ছড়িয়ে পড়ে দিকে-দিকে৷ মুখে-মুখে চলে-বেড়ানো এই গল্প যেমন অনায়াসে ডিঙোত দেশের গণ্ডি, তেমনই সহজে সেদেশের কথকের মনের মাধুরীর স্পর্শে স্ফীত হত কলেবরে৷
গল্পের বিশ্বায়ন বহুদিন হলেও মানুষের জীবনে আধুনিকতা আসতে সময় লেগেছিল ঢের৷ আধুনিকতার আগমনে বাড়তে লাগল জীবনে জটিলতা এবং ব্যস্ততা৷ সময় কমে গেল গল্প-বলা ও গল্প শোনার৷ এই সময়ে কিছু সংগৃহীত মৌখিক গল্প সংকলিত-মুদ্রিত হল৷ কিন্তু তা-ও অগ্রন্থিত রয়ে গেছে বহু কিছুই৷ স্বাধীনতার পর বাংলা একাডেমি ঢাকার উদ্যোগে বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা-য় সেদেশের লোকগল্পগুলি একত্রিত করার এক সাধু প্রয়াস হয়েছে৷ সে-কাজকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের নানা জেলায় প্রচলিত লোকগল্পের একটি বিশেষ ধারা ‘বোকাজামাই’-এর গল্প পুস্তিকাকারে বিতরিত হল এই সংখ্যার সঙ্গে৷ আশা রাখব, সংগঠিতভাবে জেলাভিত্তিক লোকগল্পের সংকলন প্রকাশিত হবে এই বাংলা থেকেও৷ সে-কাজটি থেকে আমরা যেমন জানতে পারব নানা জানা-অজানা গল্প-দাস্তান তেমনি দেখব একই গল্পের কেমন করে জেলাভেদে বদলে যায় রূপ-রস-গন্ধ৷ যেমন গ-ল-প-এর গল্পটাই নদী-নালা-খাল-বিলের দেশে পালটে যায়: গ-ল-প সেখানে পেরচ্ছিল একটা নদী, ল সাঁতার জানত না—তাই উঠে পড়ে প-এর কোলে৷
গল্প শোনার সুযোগ অণু-পরিবারের বাস করার কারণে এখন আমাদের আর নেই বললেই চলে। আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা রয়েছে মাথা বৈদ্যুতিন বিনোদনে। এই পরিস্থিতিতে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে সংক্ষেপে দেখে নিই আসুন আমাদের মৌখিক গল্পের ঐতিহ্য আর তা বলার নানা কৌশল। কারণ, মুখে-বলা এই গল্প আমাদের বিবর্তনের সাক্ষী, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামের আলেখ্য, যা কম-বেশি সব দেশেই এক— ভাষার মোড়কটাই শুধু ভিন্ন।

প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০
প্রচ্ছদ ও শিল্প-নির্দেশনা: সোমনাথ ঘোষ
সম্পাদক: সৈকত মুখার্জি

বিষয়সূচি

গল্প বলা আর শোনা
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
মনে-থাকা গল্পকথা
দেবাশিস বসু
ভাত আর ভাতছানার গপ্পো
সুধীর চক্রবর্তী
তারপরে? হুঁ৷ এরপরে?হ্যাঁ।
অশোককুমার কুণ্ডু
পরনকথার পরনকথা
মিহির সেনগুপ্ত
দাস্তান ও দাস্তানগোই: গল্প এবং গল্প বলার শিল্প
সত্যশ্রী উকিল
ময়মনসিংহের গল্প-বলার স্টাইল ও তার বিবর্তন
সুনন্দা সিকদার
গল্প ও পট
কিশোর দাস
কাঁথায় কথা:কাঁথার কথা
শ্যামলী দাস
আমি গল্প লিখি না, কবিতা লিখি না, ‘প্রস্তাব’ লিখি
দীপঙ্কর ঘোষ
কিস‍্সা-কাহিনির গল্পগাছা
অমিতাভ সেনগুপ্ত
মোগলমারির সখি
ভাস্কর দাস
বেতারে গল্পের দাদা দিদি দাদুরা
ভবেশ দাশ
নতুনভাবে গল্প-বলা
দেবাশিস গুহনিয়োগী
গল্পকথা
সৌম্যদীপ
কথা অ-মৃত
সৈকত মুখার্জি

গ্রাহক হোন
হরপ্পার গ্রাহক হতে গেলে বছরে তিনটি সংখ্যার জন্য মোট পাঁচশো টাকা দিতে হয়। (ডাকমাশুল আলাদা)
যোগাযোগ করুন ই-মেলে অথবা ফোনে কথা বলুন।

সরাসরি প্রাপ্তিস্থান
• হরপ্পার পরিবেশক পশ্চিমবঙ্গে অক্ষর প্রকাশনী, ১৮এ টেমার লেন, কলকাতা-৯ ও বাংলাদেশে বাতিঘর।
• কলেজস্ট্রিটে পাতিরাম, ধ্যানবিন্দু, দেজ, দে বুকস্টোর, উল্টোডাঙায় সুনীলদার দোকান, রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার দোকান, রিড বেঙ্গলি বুক স্টোর, শান্তিনিকেতনে রামকৃষ্ণর দোকানের মতো বহু স্টলে হরপ্পা নিয়মিত পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে হরপ্পা বিক্রি হয়।
• পত্রিকা পেতে আপনি দপ্তরেও মেল করতে পারেন।

বৈদ্যুতিন পুস্তিকা
করোনার আক্রমণে অন্তরীণ অবস্থায় ১ বৈশাখ ১৪২৭ থেকে ‘হরপ্পা’-র বৈদ্যুতিন পুস্তিকা প্রকাশের সূচনা। এই পুস্তিকা নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেখবেন চলুন...